Skip to main content

ইসলাম দাসপ্রথাকে কিভাবে মানবিক করেছে

আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকেরই  ইসলামে দাস দাসী নিয়ে খারাপ ধারণা আছে আবার এমন অনেকে আছেন এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন থেকে জবাব দিতে পারি না এমনকি হুজুরের জবাবেও মনে শান্তি পাই না। এর ফলে আস্তে আস্তে অনেকেরই ইসলামের প্রতি বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। তারা ধৈর্য্য সহকারে এই লেখাটি পড়ার অনুরোধ রইল আশা করি এ বিষয়ে পরিস্কার ধারণা আসবে এবং inshAllah, অন্যকে বিভ্রান্ত থেকে বাঁচাতে পারবেন।

ইসলাম দাস প্রথার প্রবর্তক নয়; খুব সম্ভবত সেই আদিম বর্বরতার যুগে দাস প্রথার উৎপত্তি হয়েছিল এবং তা লিখিত ইতিহাসের পুরোটা ব্যাপী বিশ্বের প্রধান প্রধান সভ্যতার বৈশিষ্ট্য ছিল। দাস প্রথা ব্যাবিলনিয়া এবং মেসোপটেমিয়াতেও প্রচলিত ছিল। খ্রিস্টান ধর্মের আবির্ভাবের পূর্বে প্রাচীন মিশর, গ্রীস ও রোমিও দাস প্রথা বিশেষ লক্ষনীয় ছিল।

দাসত্ব (ইংরেজি: Slavery বা Thralldom) বলতে বোঝায় কোনো মানুষকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা, এবং এক্ষেত্রে কোনো মানুষকে অন্য মানুষের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।

সাধারণত দুই ভাবে দাস দাসী হয়। যেমনঃ

✅ একঃ অভাব, দুর্ভিক্ষ, নদী ভাঙন, পরিবারের উপার্জনকারী সদস্যের মৃত্যু প্রভৃতি দুর্যোগ কবলিত ব্যক্তিদের বেঁচে থাকার তাগিদে স্বেচ্ছায় দাসত্ব গ্রহণ করতে হতো। তাদের বেলায় বংশপরম্পরায় গার্হস্থ্য শ্রমিক হিসেবে থেকে যাওয়াই অবধারিত ছিল।

✅ দুইঃ যুদ্ধ পরবর্তীকালে যুদ্ধে পরাজিতরা দাস দাসী হিসাবে বিবেচিত হতো।

ইসলামপূর্ব ক্রীতদাস-দাসীদের সাথে কি রকম আচরণ হতোঃ

💧ক্রীতদাস-দাসী হস্তান্তরযোগ্য পণ্য ছিল।
💧দাসীদের যৌন ব্যবসায় খাটানো এবং তাদের সন্তানদেরও দাস রুপে রাখা হত বা বিক্রি করা হত।
💧দাসদের শ্রমের মজুরি পাবার অধিকার নেই।
💧দাসমালিকরা বৈধভাবে ক্রীতদাস কে হত্যা করতে পারতো।
💧বিনা কারণে ক্রীতদাসদের কে শাস্তি দান।
💧ইচ্ছামত যা খুশি তাই করানো হতো কোন মানবিকতা থাকত না।

উৎসঃ wikipedia

💭 💭 প্রশ্নঃ

ইসলাম যদিও স্বাধীন ব্যক্তির বেচাকেনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মাধ্যমে ক্রীতদাসপ্রথার মূল উৎস বন্ধ করে দিয়েছে, দাসমুক্তির নানাবিধ পথ উন্মুক্ত করেছে কিন্তু যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসী বানানোর এই পথটি বন্ধ করেনি। কেন?

উত্তরঃ

প্রিয় পাঠক, এই মুহূর্তে উপরের লেখা পরে আপনার মনে হচ্ছে দাস প্রথা না থাকলে ভাল হতো। কিন্তু দাসপ্রথা প্রচলিত থাকা অবস্থায় নিচের বিষয়গুলি আপনার মনের কোণে উঁকি দিয়েছিল কিনা একটু যাচাই করে দেখুনঃ

🌿 বিষয় ১ঃ প্রচলিত দাস প্রথা হঠাৎ বন্ধ করলে সমাজে বিশৃঙ্খলা হবে কিনা।

🌿 বিষয় ২ঃ অতীতে যুদ্ধে কোন এলাকা দখল হলে সেখানে অনেক পুরুষ সৈনিক মারা যায়। ফলে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত এলাকায় নারীদের নিরাপত্তা কিভাবে হবে  !

🌿 বিষয় ৩ঃ যুদ্ধ বিদ্ধস্ত এলাকার নারী ও বন্দি পুরুষদের কি জেলহাজতে বন্দি রাখবেন  !
N.B:জেলহাজতে তারাই বন্দি থাকে যারা অপরাধী

🌿 বিষয় ৪ঃ যুদ্ধ বিদ্ধস্ত এলাকার নারী ও বন্দি পুরুষদের জেলহাজতে যদি রাখেনও তাহলে আজীবন লক্ষ লক্ষ বন্দি মানুষদের খরচ বহন করা একটি রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।

🌿 বিষয় ৫ঃ যুদ্ধ বিদ্ধস্ত এলাকার নারী ও বন্দি পুরুষদের স্বাধীনভাবে নিজের রাষ্ট্রে ছেড়ে দিলে ভবিষ্যতে ঐ রাষ্ট্রের হুমকি হতে পারে।

জানি এই মুহূর্তে আপনি কনফিউজড বা দ্বিধায় আছেন।

আসুন দেখি, ইসলামে কিভাবে অতীতের অমানবিক প্রচলিত দাস প্রথা অবজ্ঞা করা হয়েছে - - -

ইসলাম একটি বাস্তব ধর্ম। যুদ্ধে মুসলিমরা অমুসলিমদের হাতে বন্দি হলে তাদেরও একই পরিণতি বরণ করতে হতো। যতদিন পর্যন্ত মুসলিম যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি হবার সম্ভাবনা দূর না হয়, ততদিন পর্যন্ত মুসলিমদের জন্য অমুসলিম যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসী বানানোর সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত করে নিজ অনুসারীদের নিশ্চিত বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেবার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ইসলাম কিছুতেই নিতে পারে না। তবে ক্রীতদাস প্রথার এই উন্মুক্ত দ্বার বন্ধ করার চাবি অমুসলিমদের হাতেই রয়েছে। অমুসলিমরা মুসলিমদের সাথে মুসলিম যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসী না বানানোর চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে ক্রীতদাস প্রথার এই উন্মুক্ত পথটি চিরতরে বন্ধ করে দিতে পারে।

📝 উপরের বিষয় ১,২,৩,৪,৫ঃ যদি চিন্তা করেন তাহলে সহজ পন্থা ছিল প্রচলিত নিয়মে ক্রীতদাস/ক্রীতদাসী হিসেবে তাদেরকে সামাজিক স্বীকৃতের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে বণ্টন করে দিয়ে (নির্দিষ্ট আইনের ভিতরে ) তাদের সুশৃঙ্খল ও মানবিক ভাবে বসবাস করার অধিকার নিশ্চিত করা যা ইসলামে দেখা গিয়েছিল।
অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে খুব কাছে থেকে ইসলামকে পর্যবেক্ষণ করে ইসলামে দাখিল হবার একটি সুযোগও ক্রীতদাস/ক্রীতদাসীর সামনে খোলা থাকতো।

প্রিয় পাঠক, আমি বুঝতে পারছি এই মুহূর্তে আপনার মনে এই একটি কথা ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল - -

" ইসলাম ক্রীতদাসী ও যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে অবাধ যৌন-সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে এবং ক্রীতদাসী ও যুদ্ধবন্দিনীদের যৌনদাসীতে পর্যবসিত করেছে। "

বিষয়টি একদম মিথ্যা। কিভাবে তা বুঝার জন্য নিচের বিষয় বিস্তারিত জানতে হবে যদি আপনার দৈর্য‍্য থাকে।

>  >  >  >আরও বিস্তারিতঃ

অনেকে বলে যে, ইসলাম ক্রীতদাসী ও যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে অবাধ যৌন-সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের এই কথায় যে কেউ ভেবে বসতে পারেন, ইসলামই বুঝি ক্রীতদাসী আর যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রবর্তক। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে ক্রীতদাসী আর যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে অতিপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসা যথেচ্ছ, অমানবিক ও অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। মূল আলোচনায় যাবার আগে একটি বিষয় আমাদের ভালোভাবে মনে রাখতে হবে। তা হলোঃ  " দাসপ্রথার নিয়মকে ইসলামের সাথে গুলিয়ে ফেলা যাবে না। "

ক্রীতদাসীর সাথে সম্পর্কের পন্থাঃ

✅ ১.অবৈবাহিক বা উপবৈবাহিক বা উপপত্নী পন্থা (concubinage)।
✅ ২.বৈবাহিক পন্থা।

১.অবৈবাহিক বা উপবৈবাহিক বা উপপত্নী(concubinage) পন্থাঃ

কুরআন অবতরণের অনেক আগে থেকেই উপপত্নী গ্রহণ করা সামাজিক ভাবে স্বীকৃত একটি বিষয় ছিল।
প্রাচীন গ্রিসে,  উপপত্নী (গ্রিক "pallakis") রাখার প্রচলনের কথা সামান্য লিপিবদ্ধ থাকলেও এথেনিয়ান ইতিহাস জুড়েই তা বিদ্যমান ছিল। hetaera এর কিছু ব্যাখায় বলা হয়, তারা ছিল উপপত্নী যাদের কোন একজন পুরুষের সাথে স্থায়ী সম্পর্ক ছিল।
প্রাচীন রোমে ‘উপবিবাহ’ ছিল একটি প্রচলিত প্রতিষ্ঠান যা একজন পুরুষকে স্ত্রীভিন্ন এমন একজন নারীর (concubina, বহুবচনে concubinae) সাথে একটি অলিখিত কিন্তু স্বীকৃত বন্ধনে আবদ্ধ হবার অনুমতি প্রদান করে, যার নিচু সামাজিক মর্যাদা বিবাহের জন্য প্রতিবন্ধক ছিল। ধর্মীয় এবং পারিবারিক সংহতির জন্য হুমকিস্বরূপ না হওয়া অবধি ‘উপবিবাহ’ গ্রহণযোগ্য ছিল। “concubina” বলে পরিচিত হওয়াকে অসম্মানজনক বলে বিবেচনা করা হতো না, কেননা এই উপাধি প্রায়ই সমাধিপ্রস্তরে খোদিত থাকতো

🍀 আসুন দেখি উপপত্নী সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিঃ

কোন স্বাধীন নারীকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণের কোন সুযোগ ইসলামে নেই। কিন্তু সমাজে যখন দাসপ্রথা বিদ্যমান ছিল তখন নিজ ক্রীতদাসীকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ ইসলামে দেখা গিয়েছিল (বণ্টনকৃত যুদ্ধবন্দিনীও উপপত্নী ক্রীতদাসি হিসেবে পরিগণিত) কারণ স্ত্রী যেমন সামাজিকভাবে স্বীকৃত এই উপপত্নীও সামাজিকভাবে স্বীকৃত হতে হবে যাতে ঐ উপপত্নী অন্য পরপুরুষ থেকে নিষিদ্ধ হয়। ইসলামের এই শর্তের জন্য যুদ্ধবন্দিনী ক্রীতদাসীর জীবনও একটি সুশৃঙ্খল নিয়মে চলে গেল। এ ধরণের ক্রীতদাসীকে বলা হয় সারিয়্যাহ বা উপপত্নী। আরবী সারিয়্যাহ শব্দটি ‘সির’ হতে আগত যার অর্থ বিবাহ। উপপত্নীর সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারি ঐ নির্দিষ্ট পুরুষের কোন বৈবাহিক চুক্তি সম্পাদিত হয় না, কিন্তু সামাজিকভাবে স্বীকৃত চুক্তিবদ্ধ একটি বৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

২.বৈবাহিক পন্থাঃ একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ
   ✅ ক. নিজ ক্রীতদাসীকে বিবাহ করা।
   ✅ খ. অন্যের ক্রীতদাসীকে বিবাহ করা।

ক. নিজ ক্রীতদাসীকে বিবাহ করাঃ

দাসত্বে থাকা অবস্থায় নিজ ক্রীতদাসীকে বিবাহ করা যায় না। কোন মুনিব যদি নিজ ক্রীতদাসীকে বিবাহ করতে চায়, তবে তাকে মুক্ত করে বিবাহ করতে হবে। অর্থাৎ আগে তাকে স্বাধীন করতে হবে, অতঃপর স্বাধীন নারী হিসেবে তাকে বিবাহ করতে হবে।

💎 এই ধরণের বিবাহকে ইসলামে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।💎

📂 আবু মুসা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যার কোন ক্রীতদাসী আছে এবং সে তাকে শিক্ষাদীক্ষা দেয়, তার সাথে সদ্ব্যবহার করে, অতঃপর তাকে মুক্তি প্রদান করে বিবাহ করে, সে দ্বিগুন সওয়াব পাবে।” [সূত্র: বুখারি, অধ্যায় ৪৬, হাদিস নং-৭২০]

খ. অন্যের ক্রীতদাসীকে বিবাহ করাঃ

সূরাঃ আন-নিসা আয়াত ২৫ এর একাংশঃ
" আর তোমাদের মধ্যে কারো স্বাধীনা বিশ্বাসী (মুমিন) নারীকে বিবাহ করার সামর্থ্য না থাকলে, তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত বিশ্বাসী (মুমিন) দাসী বিবাহ করবে। আর আল্লাহ তোমাদের বিশ্বাস (ঈমান) সম্বন্ধে খুব ভালোরূপে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরে সমান। সুতরাং তারা (প্রকাশ্যে) ব্যভিচারিণী অথবা (গোপনে) উপপতি গ্রহণকারিণী না হয়ে সচ্চরিত্রা হলে, তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে তাদেরকে বিবাহ কর[1] এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদেরকে তাদের মোহর প্রদান কর।. . . .

🍀 ইসলামে ক্রীতদাসী উপপত্নী ও স্ত্রীর সাদৃশ্যঃ

১. নির্দিষ্ট স্বামী ছাড়া আর কেউ তার স্ত্রী
এবং সামাজিকভাবে স্বীকৃত তার ক্রীতদাসী উপপত্নীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। এমনকি নিজ স্ত্রীর মালিকাধীন ক্রীতদাসীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনকেও ব্যভিচার হিসেবে গন্য করা হয়।

📁 নুমান ইবনে বশির হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন যে তার স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে সহবাস করেছিল: যদি সে (অর্থাৎ স্ত্রী) তাকে (অর্থাৎ ক্রীতদাসিকে) তার (অর্থাৎ তার স্বামীর) জন্য হালাল করে থাকে, তাকে (পুরুষটিকে) একশ বেত্রাঘাত করা হবে; আর যদি সে তাকে তার জন্য হালাল না করে থাকে, আমি তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করব। [সূত্র: আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৪৫৯]

২. স্বামীর সন্তানদের জন্য স্বামীর স্ত্রী
এবং সামাজিকভাবে স্বীকৃত স্বামীর ক্রীতদাসী উপপত্নী হারাম।

৩. স্বামী যেমন স্ত্রী ও স্ত্রীর বোনকে একই সাথে বিবাহধীনে রাখতে পারে না ঠিক তেমনই স্বামী তার উপপত্নী ও উপপত্নীর বোনকে একই সাথে  উপপত্নীরুপে গ্রহণ করতে পারে না।

৪. স্ত্রী এবং সামাজিকভাবে স্বীকৃত ক্রীতদাসী উপপত্নীর সন্তান স্বাধীন ও বৈধ।

৫. স্ত্রী এবং সামাজিকভাবে স্বীকৃত ক্রীতদাসী উপপত্নীর সন্তান স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকারী।

৬. উপপত্নী ক্রীতদাসীর সন্তান, স্ত্রীর সন্তানের মতোই মুক্ত সন্তান হিসেবে পরিগণিত হয় এবং উপপত্নী ক্রীতদাসী একবার সন্তানের মা হলে (সন্তান মৃত বা জীবিত) ঐ উপপত্নীকে আর বিক্রয় করা যাবে না। সে স্বাধীন ও ঐ পরিবারে স্হায়ীভাবে অধিকার নিয়ে মাতৃপরিচয়ে বসবাস করতে পারবে।

📝 অনেকেই ভেবে থাকেন, যুদ্ধের ময়দানেই যে কোন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যে কোন মুসলিম যোদ্ধা ইচ্ছেমতো দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, ইসলামে এ ব্যাপারে কোন বাধা-নিষেধ তো নেই-ই, বরং এটিই সম্ভবত ইসলামী নিয়ম। এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। যুদ্ধক্ষেত্রে তো নয়ই এমন কি যুদ্ধ শেষ হলেও সামাজিকভাবে স্বীকৃত একটি বৈধ সম্পর্ক হওয়ার আগে যুদ্ধবন্দিনীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্হাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ যদি এ ধরণের কোন কার্যে লিপ্ত হলে তবে সেটাকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হয় এবং উক্ত ব্যক্তির ওপর ব্যভিচারের হদ প্রযুক্ত হবে।

📝 যুদ্ধক্ষেত্রে স্বামীসহ ধৃত যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ।

📝 সামাজিকভাবে স্বীকৃত কোন ক্রীতদাসী উপপত্নীর সম্মতিক্রমে তার সাথে নির্দিষ্ট কোন ব‍্যক্তির দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন বৈধ হয়ে যায় না, বরং এক ইদ্দতকাল (তথা একটি মাসিক চক্র) অতিবাহিত হবার আগে তাদের সাথে মিলিত হওয়া নিষিদ্ধ। [এই নিয়ম সেসব সামাজিকভাবে স্বীকৃত ঐ ক্রীতদাসী/যুদ্ধবন্দিনী উপপত্নীদের জন্য যারা গর্ভবতী নন]
রুওয়াইফি ইবনে সাবিত আল আনসারি হতে বর্ণিত: আমি কি তোমাদেরকে বলবো না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হুনাইনের দিনে যা বলতে শুনেছি: “আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে পানি দেওয়া (অর্থাৎ কোন গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করা)। এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় কোন যুদ্ধবন্দিনী নারীর সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে সে গর্ভবতী নয়। এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় বণ্টন হবার আগে গণিমতের কোন মাল বিক্রয় করা।” [ সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৫৮  ]

N.B: গনিমতের মাল হচ্ছে যুদ্ধে শত্রুপক্ষের স্থাবর অস্থাবর সব সম্পদ যা বিজয়ী দলের সদস্যদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়া হয় সামাজিক স্বীকৃতির মাধ্যমে।

📝 কোন ক্রীতদাসী উপপত্নী হওয়ার আগেই অর্থাৎ সামাজিকভাবে স্বীকৃত হওয়ার পূর্বেই গর্ভবতী হয়ে থাকে, তবে সন্তান প্রসবের আগে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা নিষিদ্ধ।

আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) আওতাসে ধৃত যুদ্ধবন্দিদের সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত এরশাদ বর্ণনা করেন: গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করো না যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে এবং যে নারী গর্ভবতী নয় তার সাথে (সঙ্গম) করো না যতক্ষণ না তার একটি ঋতুচক্র সম্পন্ন হয়। [ সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৫৭ ]

📝 ইসলামে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের যৌন চাহিদার স্বীকৃতি এবং তা পূরণের বৈধ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একইভাবে ক্রীতদাসদাসীদের যৌন চাহিদা পূরণের বৈধ ব্যবস্থাও ইসলামে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ক্রীতদাসীকে পতিতাবৃত্তিতে নিযুক্ত করার মতো ঘৃণ্য প্রথাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। 💎 নিজ ক্রীতদাসীকে শিক্ষদীক্ষা দিয়ে মুক্ত করে বিবাহ করতে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু কোন কারণে মুনিব যদি ক্রীতদাসীকে মুক্ত করতে ব‍্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে হয়তো তাকে নিজের সাথে জৈবিক বন্ধনে আবদ্ধ রাখবে ( সামাজিকভাবে স্বীকৃত উপপত্নী হিসেবে) অথবা অন্য কারো বিবাহাধীনে দিয়ে দেবে। অর্থাৎ যে কোন অবস্থায় ক্রীতাদাসীর জৈবিক চাহিদা পূরণের বৈধ  ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

💭 💭 প্রশ্নঃ
দাসীর অনুমতি ছাড়া তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার ইসলামে দিয়েছে কিনা !

উত্তরঃ

যে কোন দাসীর সাথে ব্যভিচার করা ইসলামে হারাম এমনকি কোন নির্দিষ্ট ব‍্যক্তির সামাজিকভাবে স্বীকৃত উপপত্নী হওয়ার পরেও ঐ ক্রীতদাসী উপপত্নীর অনুমতি ছাড়া তার সাথে ঐ নির্দিষ্ট মুনিব দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না।

এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

উৎসঃ
সূরাঃ আন-নূর ২৪ আয়াত ৩৩. আর যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ্‌ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে(১) এবং তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি চাইলে, তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে বলে জানতে পার। আর আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তোমরা তাদেরকে দান কর। আর তোমাদের দাসীরা লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে দুনিয়ার জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না। আর যারা তাদেরকে বাধ্য করবে, নিশ্চয় তাদেরকে বাধ্য করার পর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(২)

(২) এ আয়াতে বর্ণিত, “আর তোমাদের দাসীরা লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে দুনিয়ার জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না।” এখানে “লজ্জাস্থানের পবিত্ৰতা রক্ষা করতে চাইলে” কথাটি শর্ত হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি বরং সাধারণ নিয়মের কথাই বলা হয়েছে। কারণ, সাধারণত: পবিত্ৰা মেয়েদেরকে জ্যের জবরদস্তি ছাড়া অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত করা যায় না। [ফাতহুল কাদীর] আয়াতে পরবর্তীতে বলা হয়েছে, “আর যারা তাদেরকে বাধ্য করবে, নিশ্চয় তাদেরকে বাধ্য করার পর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” এখানেও এ মেয়েদেরকে ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে। যবরদস্তিকারীদেরকে নয়। যবরদস্তিকারীদের গোনাহ অবশ্যই হবে। তবে যাদের উপর যবরদস্তি করা হয়েছে আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল। [ফাতহুল কাদীর]- তাফসীরে জাকারিয়া

সহীহ হাদীসেও আছে,

৬৯৪৯. লায়স (রহ.) ... নাফি‘ (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সফীয়্যাহ বিন্ত আবূ ‘উবায়দ তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে জবরদস্তি করে যিনা করে। তাতে তার কুমারীত্ব মুছে যায়। ‘উমার (রাঃ) উক্ত গোলামকে কশাঘাত করলেন ও নির্বাসন দিলেন। কিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে কশাঘাত করলেন না। ..... হাদীসের একাংশ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)  বর্ণনাকারীঃ নাফি‘ (রহঃ)  পুনঃনিরীক্ষণঃ  সহীহ বুখারী (তাওহীদ)  ৮৯/ বল প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা (كتاب الإكراه)

প্রিয় পাঠক আপনারাই বলেন, জোর করে ক্রীতদাসী উপপত্নীর সাথে ব্যভিচার করা অবশ্যই ভাল ব‍্যবহার না। আবার ক্রীতদাসী উপপত্নীর সাথে অহংকার করে তাকে তুচ্ছ মনে করে ক্রীতদাসী উপপত্নীকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।

তাই পবিত্র কুরআনেও ক্রীতদাসী উপপত্নীর সাথে ভাল ব‍্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।

উৎসঃ
সূরাঃ আন-নিসা ৪ আয়াত ৩৬ " আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর ও কোন কিছুকে তার শরীক করো না; এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্থ, নিকট প্রতিবেশী, দুর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীকে। "

হযরত আবু হুরাইরা (রা) রাসূলুল্লাহ্ (সা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘দাস-দাসীদের জন্য যথাযথভাবে খানা পিনা ও পোশাক পরিচ্ছেদের ব্যবস্থা করা মনিবের একান্ত কর্তব্য। এবং তার সাধ্যতীত কোন কাজের জন্য তাকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।’ [ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ৫২]

অতএব বুঝা যাচ্ছে যে, জোর করে ক্রীতদাসী উপপত্নীর সাথে ব্যভিচার করা ইসলামে হারাম আবার ক্রীতদাসী উপপত্নী ছাড়া(ব‍্য‍তিত) অন‍্যের যে কোন দাসীর (দাসীর অনুমতি সহ বা অনুমতি ছাড়া) সাথে সহবাস করাও ইসলামে হারাম।

💭 💭 প্রশ্নঃ

সবই ত বুঝলাম... কিন্তু ক্রীতদাসীকে বিবাহ প্রদানের মাধ্যমেই যেখানে তার জৈবিক চাহিদা পূরণ সম্ভব ছিল সেখানে মুনিবের জন্য ক্রীতাদাসীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার বহাল রাখার যৌক্তিকতা কী ছিল?

উত্তরঃ

দাসপ্রথায় যেখানে ক্রীতদাসী যৌনপণ্যের মতো যার যখন ইচ্ছে তার উপভোগের সামগ্রী ছিল,তখন ইসলাম সেটাকে নিষেধ করেছে।

💎 ইসলাম বিবাহকে প্রাধান্য দিয়ে ক্রীতদাস প্রথা যাতে বন্ধ হয়ে যায় সেইদিকে গুরুত্ব দিয়েছে। 💎

সূরাঃ আন-নিসা আয়াত ২৫ঃ

' আর তোমাদের মধ্যে কারো স্বাধীনা বিশ্বাসী (মুমিন) নারীকে বিবাহ করার সামর্থ্য না থাকলে, তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত বিশ্বাসী (মুমিন) দাসী বিবাহ করবে। আর আল্লাহ তোমাদের বিশ্বাস (ঈমান) সম্বন্ধে খুব ভালোরূপে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরে সমান। সুতরাং তারা (প্রকাশ্যে) ব্যভিচারিণী অথবা (গোপনে) উপপতি গ্রহণকারিণী না হয়ে সচ্চরিত্রা হলে, তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে তাদেরকে বিবাহ কর[1] এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদেরকে তাদের মোহর প্রদান কর। অতঃপর বিবাহিতা হয়ে যদি তারা ব্যভিচার করে, তাহলে তাদের শাস্তি (অবিবাহিতা) স্বাধীন নারীর অর্ধেক।[2] এ (দাসী-বিবাহের বিধান) তাদের জন্য, যারা তোমাদের মধ্যে (কষ্ট ও) ব্যভিচারকে ভয় করে। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, তাহলে তাতে তোমাদের মঙ্গল রয়েছে। আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। [3]

[2] অর্থাৎ, ক্রীতদাসীদেরকে ১০০ বেত্রাঘাতের পরিবর্তে (অর্ধেক অর্থাৎ) পঞ্চাশ চাবুক মারা হবে। অর্থাৎ, তাদের জন্য রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করার শাস্তি নেই, কারণ তা অর্ধেক হয় না। আর অবিবাহিতা ক্রীতদাসীকে শিক্ষামূলক কিছু শাস্তি দেওয়া হবে।-তাফসীরে আহসানুল বায়ান
(বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর)

সূরাঃ আন-নূর আয়াত ৩২ঃ
" আর তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন(১) তাদের বিয়ে সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও।(২) তারা অভাবগ্ৰস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।"

" কোন মুনিব তার ক্রীতদাসির সাথে আলোচনা না করে তাকে কারো সাথে বিবাহ দিতে পারবে না।"
উৎসঃ বুখারি, হাদিস নম্বর ৭০৫৬; ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৯, বুক ৮৬, নম্বর ১০০

🍀 🍀 🍀 আর কোন কারণে বিবাহ না দেয়া গেলে এই শর্ত প্রযোজ‍্যঃ

🌿 ক. ক্রীতদাসীর সামাজিক মর্যাদা ও মুক্তির সুযোগ

আমরা আগেই দেখে এসেছি, ইসলামে মুনিবের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনকারি ক্রীতদাসী তথা উপপত্নী অনেকটাই তার স্ত্রী-সদৃশ। ইসলাম মুনিবের সন্তানধারণকারি ক্রীতদাসীর সামাজিক মর্যাদাকে নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে তার মুক্তির একটি পথকেও উন্মুক্ত করেছে।
ক্রীতাদাসী মুনিবের সন্তান গর্ভে ধারণ করার সাথে সাথে মুনিবের জন্য উক্ত ক্রীতদাসীকে বিক্রয় করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ফলে উক্ত ক্রীতদাসী মুনিবের পরিবারের স্থায়ী সদস্যে পরিণত হয়।

📂 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা তোমাদের সন্তান গর্ভধারিণী ক্রীতদাসীকে বিক্রয় করো না।”  [তাবারানি’র মু’যাম আল কাবির, হাদিস নং-৪১৪৭]

🌿 খ. ক্রীতদাসী মুনিবের সন্তান প্রসব করলে (জীবিত অথবা মৃত) উক্ত ক্রীতদাসী ‘উম ওয়ালাদ’ বা ‘সন্তানের মা’ হিসেবে অভিহিত হয়। সেই সন্তান মুনিবের বৈধ, স্বাধীন সন্তান হিসেবে পরিগণিত হয় এবং পিতার সম্পত্তির ঠিক সেরকম উত্তরাধিকার পায় যেরকম স্ত্রী’র সন্তানরা পেয়ে থাকে।

🌿 গ. মুনিবের মুত্যুর পর ‘উম ওয়ালাদ’ ক্রীতদাসী মুক্ত হয়ে যায়।

📝 উমর (রা.) বলেন, “তার (ক্রীতদাসীর) সন্তান তাকে মুক্ত করে যদিও তা মৃত হয়” [সূত্র: মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং ২১৮৯৪]

📝 আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন কোন ব্যক্তির ক্রীতদাসী তার সন্তান ধারণ করে, সে তার(মুনিবের) মৃত্যুর পর স্বাধীন হয়ে যায়।” [সূত্র: তিরমিযি, হাদিস নং- ৩৩৯৪]

💭 কাজেই, দেখা যাচ্ছে ক্রীতদাস প্রথায় ক্রীতদাসীর ওপর অনিয়ন্ত্রিত যে যৌনাচারের সুযোগ ছিল, ইসলাম সেটাকে নিষিদ্ধ করে, প্রচলিত উপবৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, বৈধ ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গিয়ে একদিকে ক্রীতদাসীর সন্তানকে মুক্ত, বৈধ ও পিতার সম্পত্তির উত্তারিধারী হবার সুযোগ দিয়েছে অন্যদিকে ক্রীতদাসীকে দিয়েছে একটি পারবারিক ঠিকানা ও মুক্তির পথ।

এবার নিচে কোরআনের এই আয়াত গুলি ভাল করে পড়ুন। এতক্ষণ উপরের লেখা থেকে বিস্তারিত জানার পরে আপনারা সবাই এই আয়াত গুলির মর্মার্থ বুঝতে পারবেন।

💭 💭 বিস্তারিত না জানলে কিছু লোক কোরআনের এই আয়াত গুলি দেখিয়ে আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। 💭 💭

কোরআন এর আয়াত গুলি নিম্নরূপঃ

এবার আপনি কোরআন এর এই আয়াতগুলি বিনা দ্বিধায় বুঝতে পারবেন আল্লাহ্ আপনার উপর রহম করুন।

সূরা আহযাবঃ আয়াত ৫০ঃ

হে নবী! নিশ্চয় আমি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীগণকে বৈধ করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা প্রদান করেছ[1] এবং বৈধ করেছি তোমার মালিকানাভুক্ত দাসিগণকে (সামাজিকভাবে স্বীকৃত ক্রীতদাসী উপপত্নী) যাদেরকে আমি যুদ্ধবন্দিনীরূপে দান করেছি[2] এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচাতো ভগিনী, ফুফাতো ভগিনী, মামাতো ভগিনী ও খালাতো ভগিনীকে; যারা তোমার সঙ্গে দেশ ত্যাগ করেছে[3] এবং কোন বিশ্বাসীনী নবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করলে এবং নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে (সেও তোমার জন্য বৈধ।)[4] --এ (বিধান) বিশেষ করে তোমারই জন্য; অন্য বিশ্বাসীদের জন্য নয়;[5] বিশ্বাসীদের স্ত্রী এবং তাদের দাসিগণ ( সামাজিকভাবে স্বীকৃত ক্রীতদাসী উপপত্নী) সম্বন্ধে যা নির্ধারিত করেছি তা আমি জানি।[6] (এ বিধান এ জন্য) যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়।[7] আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[1] শরীয়তে কিছু আহ্কাম নবী (সাঃ)-এর জন্য নির্দিষ্ট, যেগুলিকে নবী (সাঃ)-এর বৈশিষ্ট্য বলা হয়। যেমন উলামাদের এক দলের মত অনুযায়ী তাহাজ্জুদের নামায তাঁর জন্য ফরয ছিল, সাদাকা তাঁর জন্য হারাম ছিল, অনুরূপ কিছু বিশেষত্বের বর্ণনা কুরআন কারীমের এই স্থানে করা হয়েছে, যা বিবাহ সম্পর্কিত। যে সকল স্ত্রীদের নবী (সাঃ) মোহর আদায় করে দিয়েছেন তাঁরা হালাল। তিনি সাফিয়্যা (রাঃ)  ও জুওয়াইরিয়া (রাঃ) -কে স্বাধীন করাকেই তাঁদের মোহর ধার্য করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি সকল স্ত্রীদের মোহর নগদ আদায় করে দিয়েছিলেন; শুধু উম্মে হাবীবা (রাঃ)  ছাড়া। কারণ তাঁর মোহর বাদশাহ নাজাশী আদায় করেছিলেন।
[2] সুতরাং সাফিয়্যা (রাঃ)  ও জুওয়াইরিয়া (রাঃ)  নবী (সাঃ)-এর মালিকানায় এলে তিনি তাঁদেরকে মুক্ত করে বিবাহ করেছিলেন এবং রায়হানা (রাঃ)  ও মারিয়া কিবত্বিয়া (রাঃ)  ক্রীতদাসী ( সামাজিকভাবে স্বীকৃত ক্রীতদাসী উপপত্নী) হিসাবে নবী (সাঃ)-এর নিকট ছিলেন। পরে বিবাহও করেছিলেন।
[3] এর অর্থ হল যেমন নবী (সাঃ) হিজরত করেছিলেন, অনুরূপ তাঁরাও মক্কা থেকে মদীনা হিজরত করেছিলেন। যেহেতু নবী (সাঃ)-এর সাথে কোন নারী হিজরত করেননি।
[4] অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট যদি কোন মহিলা নিজেকে নিবেদন করে এবং তিনি তাকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক হন আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী , তাহলে তাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করা তাঁর জন্য হালাল।
[5] উপরোক্ত বিধান শুধু নবী (সাঃ)-এর জন্য। অন্য মু’মিনদের জন্য আবশ্যিক যে, সে (রীতিমতো) মোহর আদায় করবে, তবেই বিবাহ বৈধ হবে।
[6] অর্থাৎ, বিবাহ বন্ধনের যে শর্ত ও অধিকারসমূহ যা আমি ফরয করেছি।
[7] এটা ‘إنَّا أحْلَلْنَا’ এর সাথে সম্পৃক্ত অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী করা হয়েছে , যাতে নবী (সাঃ) অসুবিধা মনে না করেন এবং তিনি তাদের মধ্যে কাউকে বিবাহ করাতে মনে পাপবোধ না করেন।

সূরা আহযাবঃ আয়াত ৫২ঃ

এরপর আপনার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং আপনার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহনও বৈধ নয়, যদিও তাদের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে(১); তবে আপনার ( সামাজিকভাবে স্বীকৃত ক্রীতদাসী উপপত্নী) অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপার ভিন্ন। আর আল্লাহ্ সবকিছুর উপর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণকারী।
(১) ইবন আব্বাস, মুজাহিদ, দাহহাক, কাতাদাহ সহ অনেক আলেমের নিকট এ আয়াতটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের পুরষ্কারস্বরূপ নাযিল হয়েছিল। তারা যখন দুনিয়ার সামগ্ৰীর উপর আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কষ্টকর জীবন বেছে নিয়েছিলেন, তখন আল্লাহ তাদেরকে এ আয়াত নাযিল করে তাদের অন্তরে খুশীর প্রবেশ ঘটালেন। [ইবন কাসীর]- তাফসীরে জাকারিয়া

🍀 সারকথাঃ

অতীতে যখন দাসপ্রথা চালু ছিল ইসলামের পূর্ব থেকেই তখন আমরা দেখেছি ইসলাম কিভাবে দাসপ্রথাকে মানবিক করেছে এবং দাসপ্রথা যাতে বন্ধ হয়ে যায় সেইদিকে গুরুত্ব দিয়েছে।বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেকেই জ্ঞানের অজ্ঞতার কারণে স্যালারীর বিনিময়ে কর্মরত গৃহকর্মীদের দাসী বলে মনে করে। যা ঠিক নয় তারা চাকুরিজীবীদের মতই স্বাধীন। তাই এ সকল নারীদের প্রতি গৃহকর্তার কামভাব জাগ্রত করা নিষিদ্ধ। কারণ এ সকল নারীদের প্রতি গৃহকর্তার কামভাব জাগ্রত করা ইসলাম কোনভাবেই সমর্থন করে না !
এই পৃথিবীতে কেউ যদি মেয়েদের অসহায়ত্ত্বের সুযোগ নিয়ে ইসলামের দোহাই দিয়ে মেয়েদের সাথে ব‍্যভিচার করে তাহলে তাদের উপযুক্ত শাস্তি ( punishment ) হওয়া উচিত।
এইসব শ্রেণির লোকদের বুঝা উচিত ইসলামে নারীদের সাথে ব‍্যভিচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ যা আপনারা এতক্ষণ উপরের দীর্ঘ আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন। কিছু শ্রেণির লোক,যে ধর্মেরই হোক না কেন তারা ইসলামের দোহাই দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। এই শ্রেণির লোকদের মাধ্যমে যাতে ইসলামের ক্ষতি না হয় তার জন‍্য সমাজের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

💭 সমালোচনা করাই যাদের লক্ষ্য তারা সমালোচনা করবেই, কিন্তু চিন্তা ও উপলদ্ধির দ্বারা যারা এই সমালোচনার জবাব দিতে পারবেন না তারা আসলেই হতভাগা।

Comments

Popular posts from this blog

কেন ! কেন ! মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে শিশু ধর্ষক বা শিশু কামী বলা যাবে না ! যাবে না !

আমরা যারা মুসলিম সবাই এই একটি কথা অবশ্যই বিশ্বাস করি সেটা হল পবিত্র কুরআনে যা বলা আছে তা একশত ভাগ সত্য। কিন্তু অবশ্যই কর্তব্য এমন একটি কাজ আছে যেটা করার সময় আমাদের  অনেকেরই হয় না আমাদের দৈনন্দিন ব‍্যস্ততার কারণে। আর সেই কাজটি হল পবিত্র কুরআনে যা বলা আছে তা বাস্তবিক জীবনে প্রয়োগ করা। পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদীস ঠিক মত না জানার কারণে আমরা অনেকেই বিভ্রান্তির শিকার হই কিছু মানুষের দ্বারা যারা পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদীস দিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমরা সঠিকভাবে পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদীস না জানার কারণে এই বিভ্রান্তির শিকার হই। অনেক বিভ্রান্তিকর প্রশ্নগুলোর মধ‍্যে একটি স্পর্শকাতর প্রশ্ন যেটা ইনশাআল্লাহ আজকে আলোচনা করব। প্রশ্নঃ মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কি শিশু ধর্ষক বা শিশু কামী ছিলেন ? উত্তরঃ মূল বক্তব্যঃ রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের সময় সাহাবীর সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ চৌদ্দ হাজার। তাদের সব সময় রাসূল (সা.) এর কাছে থেকে তাঁর সকল কথা শুনা বা সকল কাজ দেখা সম্ভব ছিল না। তাই অধিকাংশ সাহাবীর জানা থাকা হাদীসের মধ্যে কিছু ছিল রাসূল (সা.) এর নিকট থেকে সরাসরি শুনা বা দে

কে গাণিতিক হিসাবে এগিয়ে ? সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী ও সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসীর মধ্যে !

কাল্পনিক দুইটি নাম (রাহি, মাশা) দিয়ে একটি অংক বুঝার চেষ্টা করি যেখানে আমরা বুঝতে পারব সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী ও সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসীর মধ্যে কে বেশি লাভবানঃ ধরি, মাশা = সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী রাহি = সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী মাশার স্ত্রীর নাম   = মাহি রাহির স্ত্রীর নাম   = রানু বি. দ্রঃ রাহি ও মাশা একটি কোম্পানিতে প্রায় একই বয়সে (ধরি, ২৫ বছর বয়সে) একই সাথে খুব ছোট পোস্টে যোগদান  করে (কারণ তাদের পড়াশুনা খুবই কম ছিল) এবং তাদের বেতন সমান। পড়াশুনা খুবই কম থাকার কারণে তাদের বছরের পর বছর কাজ করার পরেও কোন প্রমোশন হচ্ছিল না। সৃষ্টিকর্তাকে অবিশ্বাস করার ফলে কোন ভয় না করে মাশা চাকরির পাশাপাশি অল্প কিছু টাকা দিয়ে সুদের ব‍্যবসা সহ লোক ঠকানোর কাজ শুরু করল এবং এই অবৈধ ব‍্যবসা থেকে আস্তে আস্তে লাভও হতে শুরু করল। অপরদিকে, সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করার কারণে রাহি চাকরির পাশাপাশি নিজে কষ্ট করে হলেও গরিবদের সাহায্য করত। রানু ও মাহি বান্ধবী। হঠাৎ তারা কি মনে করে একটি সিদ্ধান্তে আসল। সিদ্ধান্তটি হল, যদি বেঁচে থাকে জীবনের শেষ পর্যায়ে  তারা যাচাই করবে তাদের স্বামীদের মধ‍্যে কার ক্রেডিট বেশি। প্রায় ২৫ ব

About Me

My photo
সত্য কথা
I have an interest in writing about the real truth of Islam. Study: I have completed BSC Engineering.