Skip to main content

অনেকেই বলে কোরআনে সূরা তালাকের ৪ নম্বর আয়াতে আছে, ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি এরকম মেয়েকে বিয়ে করা যায়েজ। কথাটি সত‍্য নাকি মিথ্যা !

🌿 প্রশ্নঃ অনেকেই বলে কোরআনে সূরা তালাকের ৪ নম্বর আয়াতে আছে, ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি এরকম মেয়েকে বিয়ে করা যায়েজ। কথাটি সত‍্য নাকি মিথ্যা !

উত্তরঃ
সূরা আত-ত্বলাক্ব এর ৪ নম্বর আয়াতঃ

" তোমাদের যেসব স্ত্রীদের মাসিক হবার আশা নেই, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যাদের এখনো মাসিক হয়নি তাদেরও।[1] আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত।[2] আল্লাহকে যে ভয় করবে, তিনি তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন। "

N.B:  ইদ্দতঃ স্ত্রী তালাক প্রাপ্তা হলে বা তার স্বামীর মৃত্যু হলে, স্ত্রী গর্ভবতী হয় কিনা দেখার জন‍্য যে সময় উক্ত স্ত্রীকে এক বাড়ীতে থাকতে হয়, অন্যত্র যেতে পারে না বা অন্য কোথাও বিবাহ বসতে পারে না তাকে “ইদ্দত” বলে।

🌿 তাফসীরে আহসানুল বায়ানঃ

[1] এ হল সেই মহিলাদের ইদ্দত, যাদের বার্ধক্যের কারণে মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে অথবা যাদের এখনোও মাসিক আরম্ভ হয়নি। জ্ঞাতব্য যে, বিরল হলেও এমনও হয় যে, মেয়ে সাবালিকা হয়ে যায়, অথচ তার মাসিক আসে না।

[2] তালাকপ্রাপ্তা মহিলা যদি গর্ভবতী হয়, তবে তার ইদ্দত হল সন্তান প্রসব করা সময় পর্যন্ত, যদিও সে তালাকের দ্বিতীয় দিনে প্রসব করে তবুও। এ ছাড়া আয়াতের বাহ্যিক অর্থ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেক গর্ভবতীর ইদ্দত এটাই; তাতে সে তালাকপ্রাপ্তা হোক অথবা তার স্বামীর মৃত্যু হয়ে থাকুক। বহু হাদীস থেকেও এর সমর্থন হয়। (আরো জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য সুনান গ্রন্থসমূহের তালাক অধ্যায়) গর্ভবতী ছাড়া অন্যান্য যে মহিলাদের স্বামী মৃত্যু বরণ করবে, তাদের ইদ্দত হল ৪ মাস ১০ দিন। (সূরা বাকারাহ ২৩৪ নং আয়াত)

💭 সূক্ষ বিশ্লেষণঃ

প্রিয় পাঠক, উপরে বর্ণিত সূরা আত-ত্বলাক এর ৪ নম্বর আয়াতের প্রথম বাক্যটি হল -

" তোমাদের যেসব স্ত্রীদের মাসিক হবার আশা নেই, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যাদের এখনো মাসিক হয়নি তাদেরও।- - -

এই বাক‍্যটির শেষের কথাটি হল -

- - এবং যাদের এখনো মাসিক হয়নি। - -
তাদেরও।-

মূলত কিছু লোক এই কথার উপর ভিত্তি করেই বলে থাকে যে ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি এরকম মেয়েকে বিয়ে করা যায়েজ। যা একটি বাক‍্যের প্রকৃত অর্থ বুঝার মারাত্মক ভূল।

নিচে তা ব‍্যাখ‍্যা করা হলঃ

✅ Point 1:
" যাদের মাসিক হয়নি " এর অর্থ ঐ সকল মেয়েরা যাদের বয়স, জন্মের ১ম বছর থেকে সাধারণত যে বয়সে মেয়েদের  মাসিক হয় সে বয়স পযর্ন্ত বুঝায়।

✅ Point 2:
" যাদের এখনো মাসিক হয়নি " এর অর্থ শুধুমাত্র ঐ সকল মেয়েরা যাদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও মাসিকের সময় পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনো মাসিক হয়নি(সমস‍্যা গত কারণে হতে পারে) বুঝায়।

এখানে আপনারা খেয়াল করলে বুঝবেন,
Point 1 ও  Point 2 এর মধ্যে ভাষার  অর্থের মারাত্মক পার্থক্য হয়েছে কেবলমাএ একটি শব্দের কারণে এবং সেটা কোন্ শব্দ পাঠকরা হয়ত এতক্ষণে বুঝে গেছেন।

সেই শব্দটি হলঃ ⏩ " এখনো  "

এই " এখনো " শব্দটির জন্য Point 1 ও  Point 2 এর মধ্যে ভাষার  অর্থের মারাত্মক পার্থক্য হয়ে গেছে। এখানে কোরআনের ভাষার অর্থ  Point 2 তে ব‍্যাখ‍্যা করা হয়েছে। এই Point 2 এর ব‍্যাখ‍্যা অনুসারে  " ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি এরকম মেয়েকে বিয়ে করা যায়েজ" কথাটি কোরআনে বর্ণিত এই আয়াতে বলা হয় নাই। এটা যে অনেকেই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে সেটা এই লেখাটি নিরপেক্ষভাবে যাচাইবাছাই করলেই বুঝতে পারবেন।

🍀 সারকথাঃ

কোরআনের ভাষা বিশুদ্ধ আরবি। আরবি বর্ণের উচ্চারণের মধ্যেও শব্দের অর্থের ব্যবধান আছে। তাই কোরআন ও হাদিসের শব্দের উচ্চারণ সঠিকভাবে করতে না পারলে অর্থে তারতম্য ঘটে যেখানে একটি বাংলা অনুবাদকৃত শব্দ ⏩ " এখনো " এর জন্য Point 1 ও  Point 2 এর মধ্যে ভাষার  মূল অর্থের মারাত্মক পার্থক্য হয়ে গেছে। সেই সাথে সবার  সতর্ক থাকতে হবে কোরআনের বিশুদ্ধ আরবি ঠিকমত উচ্চারণ করা যাতে কোরআনের ভাষার অর্থ ঠিক থাকে।

অতএব, প্রিয় পাঠকরা, উপরের লেখাটির সূক্ষ বিশ্লেষণ যদি নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করতে পারেন তাহলে বুঝবেন, " ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি এরকম মেয়েকে বিয়ে করা যায়েজ" কথাটি কোরআনে বর্ণিত এই আয়াতে অবশ‍্যই বলা হয় নাই।

🌿 ইদ্দতের সময় ইসলামের বিধানঃ

ইদ্দতের সময়কালে, স্বামীর জন্য স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার কোনও অধিকার নেই। স্ত্রীর জন্যও স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া জায়েজ নয়। বরং একটি বাড়িতে একসাথে থাকবে যাতে পারস্পরিক সমঝোতার ও মনমালিন্যতা দূর হওয়ার যেন অবকাশ থাকে। আর ‍উভয়ে এক বাড়িতে থাকলে এটা সহজ হবে। বিবাহবিচ্ছেদ একটি বাধ্যবাধকতা, তবে বৈধ বিষয়গুলির মধ্যে এটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় বিষয়। এর কারণেই, তিনি তার বান্দাদেরকে রক্ষা করার জন্য বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ইদ্দতের শর্ত আরোপ করেছেন। স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে একই বাড়িতে থাকার প্রয়োজন, যাতে তারা উভয়ে ধীর স্থিরভাবে,ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারে, শেষ পদক্ষেপটি নেওয়ার আগে নিজেদের স্থির করতে পারে। বিবাহ বিচ্ছেদের পরিবর্তে কোন সংশোধন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না তা যেন ভাবতে পারে। তবে স্ত্রীর আবশ্যকীয় প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে পারবে ।

source:
ইদ্দতের সময় ইসলামের বিধান

https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%87%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%A4

Comments

Popular posts from this blog

কেন ! কেন ! মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে শিশু ধর্ষক বা শিশু কামী বলা যাবে না ! যাবে না !

আমরা যারা মুসলিম সবাই এই একটি কথা অবশ্যই বিশ্বাস করি সেটা হল পবিত্র কুরআনে যা বলা আছে তা একশত ভাগ সত্য। কিন্তু অবশ্যই কর্তব্য এমন একটি কাজ আছে যেটা করার সময় আমাদের  অনেকেরই হয় না আমাদের দৈনন্দিন ব‍্যস্ততার কারণে। আর সেই কাজটি হল পবিত্র কুরআনে যা বলা আছে তা বাস্তবিক জীবনে প্রয়োগ করা। পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদীস ঠিক মত না জানার কারণে আমরা অনেকেই বিভ্রান্তির শিকার হই কিছু মানুষের দ্বারা যারা পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদীস দিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমরা সঠিকভাবে পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদীস না জানার কারণে এই বিভ্রান্তির শিকার হই। অনেক বিভ্রান্তিকর প্রশ্নগুলোর মধ‍্যে একটি স্পর্শকাতর প্রশ্ন যেটা ইনশাআল্লাহ আজকে আলোচনা করব। প্রশ্নঃ মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কি শিশু ধর্ষক বা শিশু কামী ছিলেন ? উত্তরঃ মূল বক্তব্যঃ রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের সময় সাহাবীর সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ চৌদ্দ হাজার। তাদের সব সময় রাসূল (সা.) এর কাছে থেকে তাঁর সকল কথা শুনা বা সকল কাজ দেখা সম্ভব ছিল না। তাই অধিকাংশ সাহাবীর জানা থাকা হাদীসের মধ্যে কিছু ছিল রাসূল (সা.) এর নিকট থেকে সরাসরি শুনা বা দে

কে গাণিতিক হিসাবে এগিয়ে ? সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী ও সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসীর মধ্যে !

কাল্পনিক দুইটি নাম (রাহি, মাশা) দিয়ে একটি অংক বুঝার চেষ্টা করি যেখানে আমরা বুঝতে পারব সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী ও সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসীর মধ্যে কে বেশি লাভবানঃ ধরি, মাশা = সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী রাহি = সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী মাশার স্ত্রীর নাম   = মাহি রাহির স্ত্রীর নাম   = রানু বি. দ্রঃ রাহি ও মাশা একটি কোম্পানিতে প্রায় একই বয়সে (ধরি, ২৫ বছর বয়সে) একই সাথে খুব ছোট পোস্টে যোগদান  করে (কারণ তাদের পড়াশুনা খুবই কম ছিল) এবং তাদের বেতন সমান। পড়াশুনা খুবই কম থাকার কারণে তাদের বছরের পর বছর কাজ করার পরেও কোন প্রমোশন হচ্ছিল না। সৃষ্টিকর্তাকে অবিশ্বাস করার ফলে কোন ভয় না করে মাশা চাকরির পাশাপাশি অল্প কিছু টাকা দিয়ে সুদের ব‍্যবসা সহ লোক ঠকানোর কাজ শুরু করল এবং এই অবৈধ ব‍্যবসা থেকে আস্তে আস্তে লাভও হতে শুরু করল। অপরদিকে, সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করার কারণে রাহি চাকরির পাশাপাশি নিজে কষ্ট করে হলেও গরিবদের সাহায্য করত। রানু ও মাহি বান্ধবী। হঠাৎ তারা কি মনে করে একটি সিদ্ধান্তে আসল। সিদ্ধান্তটি হল, যদি বেঁচে থাকে জীবনের শেষ পর্যায়ে  তারা যাচাই করবে তাদের স্বামীদের মধ‍্যে কার ক্রেডিট বেশি। প্রায় ২৫ ব

ইসলাম দাসপ্রথাকে কিভাবে মানবিক করেছে

আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকেরই  ইসলামে দাস দাসী নিয়ে খারাপ ধারণা আছে আবার এমন অনেকে আছেন এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন থেকে জবাব দিতে পারি না এমনকি হুজুরের জবাবেও মনে শান্তি পাই না। এর ফলে আস্তে আস্তে অনেকেরই ইসলামের প্রতি বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। তারা ধৈর্য্য সহকারে এই লেখাটি পড়ার অনুরোধ রইল আশা করি এ বিষয়ে পরিস্কার ধারণা আসবে এবং inshAllah, অন্যকে বিভ্রান্ত থেকে বাঁচাতে পারবেন। ইসলাম দাস প্রথার প্রবর্তক নয়; খুব সম্ভবত সেই আদিম বর্বরতার যুগে দাস প্রথার উৎপত্তি হয়েছিল এবং তা লিখিত ইতিহাসের পুরোটা ব্যাপী বিশ্বের প্রধান প্রধান সভ্যতার বৈশিষ্ট্য ছিল। দাস প্রথা ব্যাবিলনিয়া এবং মেসোপটেমিয়াতেও প্রচলিত ছিল। খ্রিস্টান ধর্মের আবির্ভাবের পূর্বে প্রাচীন মিশর, গ্রীস ও রোমিও দাস প্রথা বিশেষ লক্ষনীয় ছিল। দাসত্ব (ইংরেজি: Slavery বা Thralldom) বলতে বোঝায় কোনো মানুষকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা, এবং এক্ষেত্রে কোনো মানুষকে অন্য মানুষের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। সাধারণত দুই ভাবে দাস দাসী হয়। যেমনঃ ✅ একঃ অভাব, দুর্ভিক্ষ, নদী ভাঙন, পরিবারের উপার্জনকারী সদস্যের মৃত্যু প্রভৃতি দুর্যোগ কবলিত ব

About Me

My photo
সত্য কথা
I have an interest in writing about the real truth of Islam. Study: I have completed BSC Engineering.